লাইটের গতি কখনো ধীর হতে পারে?

আলো বা লাইট হচ্ছে প্রকৃতির সবচেয়ে রহস্যময় ও মৌলিক এক শক্তি।
আমরা সাধারণভাবে জানি — আলো সর্বোচ্চ গতিতে চলে, যা প্রায়:
299,792,458 মিটার/সেকেন্ড (≈ 3×10⁸ m/s)
(সূত্র: CODATA Recommended Values, NIST)
এই গতি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের মূল ভিত্তি আলোর গতি ধ্রুবক (constant) — এমনটাই ধরে নেয়।
তবে প্রশ্ন হলো:
👉 আলো কি কখনো ধীর হতে পারে?
👉 বা এমন কি সম্ভব যে আলো একেবারে থেমে যায়?
উত্তর: হ্যাঁ। নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে আলোর গতি উল্লেখযোগ্যভাবে ধীর হতে পারে — এমনকি শূন্যের কাছাকাছিও যেতে পারে।
🧪 আলো ধীর হয় কিভাবে?
আলো যখন ভ্যাকুয়াম (শূন্যস্থান) দিয়ে চলে, তখনই এর গতি সর্বোচ্চ থাকে।
কিন্তু যখন এটি কোনো মাধ্যম (যেমন: পানি, কাচ, কিংবা বিশেষভাবে প্রস্তুত পদার্থ) অতিক্রম করে, তখন তা ধীর হয়ে যায়।
কারণ হলো:
মাধ্যমে থাকা কণার (atoms/molecules) সাথে আলো ক্রমাগত ইন্টার্যাক্ট করে — শোষণ, পুনরায় নিঃসরণ ও বিলম্ব ঘটে। ফলে, আলো তার গতি কিছুটা হারায়।
উদাহরণ:
ভ্যাকুয়ামে: ~299,792 km/s
পানিতে: ~225,000 km/s
কাচে: ~200,000 km/s
ডায়মন্ডে: ~124,000 km/s
(সূত্র: HyperPhysics, Georgia State University)
🧊 গবেষণায় আলোর গতি ধীর হওয়া: অবিশ্বাস্য বাস্তবতা
২০০১ সালে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ Dr. Lene Hau এবং তার গবেষণা দল এক বিপ্লবী গবেষণায় দেখান, আলোর গতি ১৭ মিটার/সেকেন্ডে কমিয়ে আনা সম্ভব।
পরীক্ষায় তারা ব্যবহার করেন একটি বিশেষ পদার্থ:
👉 Bose–Einstein Condensate (BEC)
এটি হলো অত্যন্ত নিম্ন তাপমাত্রায় (ন্যানোকেলভিন) সুপারকুলড করা পারমাণবিক গ্যাস, যেখানে কণাগুলো কোয়ান্টাম লেভেলে একসাথে আচরণ করে।
তারা প্রথমে একটি আলোর পালস (pulse) প্রেরণ করে BEC-এর ভিতরে,
তারপর সেটি ধীর করে প্রায় থেমে যেতে বাধ্য করে,
এমনকি আলোকে ধরে রেখে পরে আবার মুক্তও করে।
📚 সূত্র:
-
Lene Vestergaard Hau et al. “Light speed reduction to 17 metres per second in an ultracold atomic gas”, Nature, 2001
পরে ২০০৫ সালে তারা এই কৌশল দিয়েই “stopped light”–এর সফলতা দেখান।
🧠 এর তাৎপর্য কী?
এই আবিষ্কারগুলো আমাদেরকে দুটি বড় শিক্ষা দেয়:
-
আলোর গতি নির্ভর করে পরিবেশের উপর — এটা ধ্রুব নয়, বরং আপেক্ষিক।
-
আমরা ভবিষ্যতে এমন প্রযুক্তি তৈরি করতে পারি, যেখানে তথ্য (আলোতে এনকোডেড) থামিয়ে রাখা যাবে — এই ধারণা Quantum Communication ও Light-based Memory Storage–এর ভিত্তি।
🪞 সাধারণ বাস্তবেও আপনি দেখছেন ধীর গতি
আপনি জানেন কি?
-
আপনার চশমা বা ক্যামেরার লেন্সে আলো ধীর হয়ে দিক বদলায়, যাকে বলে Refraction।
-
রংধনু হয় এই আলোর ধীরগতির কারণে, যেখানে বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্য ভিন্নভাবে ধীরে চলে।
-
ফাইবার অপটিক্স, যার মাধ্যমে আজ ইন্টারনেট চলে, তা আলোকে গ্লাস ফাইবারে প্রবাহিত করে ধীর গতিতে বারবার প্রতিফলন ঘটায়।
🧭 উপসংহার: আলো যেমন গতি, তেমনি চিন্তারও প্রতীক
আলো কেবল পদার্থ না — এটি বিজ্ঞান, দর্শন ও মানব চিন্তার এক প্রাচীন প্রতীক।
আমরা আজ জানি, যা সবচেয়ে দ্রুত — তা-ও থামানো যায়।
এটা আমাদের শেখায়, কোনো কিছুই চিরস্থায়ী নয়, এমনকি আলোর গতিও না।
📚 রেফারেন্স ও Further Reading:
-
Lene Hau et al., Nature, 2001: “Light speed reduction to 17 m/s”
-
National Institute of Standards and Technology (NIST) - Speed of Light
-
HyperPhysics, Georgia State University
-
Scientific American – “Physicists Stop Light Completely”
-
MIT Technology Review – “How Lene Hau slowed light to a standstill”
নিউসলেটারে সাবস্ক্রাইব করুন
আপডেট পান আমাদের সর্বশেষ বিজ্ঞান আর্টিকেল এবং খবর নিয়ে সরাসরি আপনার ইনবক্সে।